বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরান কোভিড-১৯ সারা বিশ্বেও মত আজ বাংলাদেশেও হানা দিয়েছে। এতে থমকে গেছে সকল কর্মকান্ড। আর এমন পরিস্থিতিতে চরম বিপাকে পড়েছে রাজশাহীতে আবাসন নিয়ে কাজ করা রিয়েল এস্টেট এবং ডেভেলপার কম্পানিগুলো। রাজশাহীতে আবাসন খাতে বর্তমানে পায় ১ হাজার ২’শ কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। এই শিল্পের ২৫৪ টি প্রতিষ্ঠানে প্রায় ২ লক্ষ মানুষ এর সাথে জড়িত। তাই রাজশাহীর সবচাইতে বড় এই শিল্পটিকে বাঁচাতে সরকারের ঘোষিত প্রণোদনা তহবিল থেকে ২’শ কোটি টাকা প্রণোদনা চান এই প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্নয়ে গঠিত সংগঠন “রিয়েল এস্টেট এন্ড ডেভেলর্পাস এ্যাসোসিয়েশন (রেডা) রাজশাহী”।
রবিবার দুপুর ২টায় প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে সরকারের প্রধানমন্ত্রীর নিকট তাদেও দাবি তুলে ধরেন রিয়েল এস্টেট এন্ড ডেভেলর্পাস এ্যাসোসিয়েশন ‘রেডা’র সাধারন সম্পাদক মিজানুর রহমান কাজী। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে অনুষ্ঠিত প্রেস কনফারেন্সের উপস্থিত ছিলেন – রেডার সভাপতি তৌফিকুর রহমান লাবলু, রেডার সাধারণ সম্পাদক ও আল-আকসা প্রাঃ লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান কাজী, সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফিরোজা ইঞ্জিনিয়ারিং কোঃ-এর সত্ত¡াধিকারী মেজবাহুল বারী সওদাগর, আদ-দ্বীন প্রোর্পাটিজ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: হোসেন আলী, পারফেক্ট লিভিং-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম.এম সিহাব পারভেজ, সামস্ রিয়েল এস্টেট কোঃ লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুল ইসলাম, প্রথম শ্রেণীর ঠিকাদার ও ডেভলপার কবির হোসেন, শ্যামল ছায়া হাউজিং লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আকতারুল হুদা রুমেল, ড্রিম স্মিথ প্রোর্পাটিজ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: গোলাম দস্তগীর এছাড়াও বিভিন্ন ডেভেলপার কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালকবৃন্দ ছাড়াও বিভিন্ন গনমাধ্যমের সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রেস কনফারেন্সে রেডার সাধারন সম্পাদক মিজানুর রহমান কাজী বলেন, ২০১৭ সালে রাজশাহীতে অবস্থিত রিয়েল এস্টেট এবং ডেভেলপারদের নিয়ে পারস্পারিক সর্ম্পক উন্নয়নে এবং মানুষের আবাসনের স্বপ্ন পুরনে একটি এ্যাসোসিয়েশন তৈরী হয় যার নাম করন করা হয় “রিয়েল এস্টেট এন্ড ডেভেলর্পাস এ্যাসোসিয়েশন (রেডা) রাজশাহী”। শুরু হতেই এই এ্যাসোসিয়েশন এর কার্যক্রম সকল শ্রেনীর প্রসংশা অর্জন করে। বর্তমানে এই এ্যাসোসিয়েশনের সদস্যবৃন্দের ৩২টি প্রজেক্টের ১০০টির অধিক ফ্ল্যাট হস্তান্তর করা হয়েছে। ফিনিশিং স্টেজে রয়েছে ২২টি প্রজেক্টের ৬৫টি ফ্ল্যাট এছাড়া চলমান রয়েছে ৫৮টি প্রজেক্টের ৪০০টির অধিক ফ্ল্যাট। এই শিল্পের সাথে ২৫৪টি প্রতিষ্টান জড়িত, এখানে প্রায় ১০,০০০/- টি আইটেম ব্যবহৃত হয়। ফলে এই শিল্প ক্ষতিগ্রস্থ হলে এর সাথে জড়িত ২৫৪টি প্রতিষ্ঠানই কমবেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়। রাজশাহীতে এই সেক্টরে প্রায় ২ লক্ষ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরক্ষোভাবে জড়িত। রাজশাহীতে ডেভেলপারদের প্রায় ১২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ রয়েছে । এ অঞ্চলের সব থেকে বড় শিল্পই হচ্ছে এই সেক্টরটি।
তিনি বলেন, রাজশাহীতে স্বাধীনতার পর হতে ২০১০ সাল পর্যন্ত ১টি দশ তলা বিল্ডিং ছিল, বর্তমানে প্রায় ১০০টির মতো দশ তলা রয়েছে এই শহরে যার বেশির ভাগ তৈরী হয়েছে ডেভেলপারদের দ্বারা। এটি রাজশাহীবাসীর জন্য অত্যান্ত গর্বের একটি বিষয়। গ্রীন সিটি, ক্লিন সিটি, এডুকেশন সিটির সাথে এবার যুক্ত হতে যাচ্ছে আধুনিক সিটি, যা রাজশাহীকে ভবিষতের পর্যটন নগরী হিসাবে গড়ে তুলতে সহায়তা করবে। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামানের নেতৃত্বে সরকারে আবাসনের স্বপ্ন পুরনে কাজ করছে এই এ্যাসোসিয়েশন। ইতিমধ্যেই এই এ্যাসোসিয়েশন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং চেম্বার অব কমার্স, ফায়ার সার্ভিসকে সাথে নিয়ে মানুষের মাঝে সচেতনতা তৈরী এবং বিভিন্ন ডির্পাটমেন্ট এর সমন্বয় সাধনের নিমিত্তে সচেতনতা মুলক কর্মশালা করেছে। এছাড়া স্বপ্নের আবাসনকে মানুষের কাছে সহজ লভ্য করার নিমিত্তে সকল ডেভেলপার এর প্রডাক্ট এক ছাদের নিচে নিয়ে ৩টি আবাসন মেলার আয়োজন করেছে।
তিনি আরও বলেন, দেশের বড় বড় কোম্পানীগুলো রাজশাহীতে বিনিয়োগে আগ্রহী হয় না কারন বড় কোম্পানীগুলোর ওভারহেড খরচ বেশি এছাড়া রাজশাহী অঞ্চলে ফ্ল্যাটের দাম কম হওয়ার কারনে এর লভ্যাংশও অনেক অনেক সীমিত। বর্তমানে স্থানীয় এবং কিছু ছোট ছোট কোম্পানী রাজশাহীর মানুষের তথা সরকারের অঙ্গিকার পুরণে কাজ করে যাচ্ছে। রাজশাহীর অঞ্চলের মানুষের আয়ের সক্ষমতার উপর ভিত্তি করে মুলত ফ্ল্যাটের দাম নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। এর ফলে ডেভেলপারকে তার লভ্যাংশের বড় একটি অংশ ছাড় দিতে হয়।
মিজানুর রহমান কাজী দু:খ প্রকাশ কওে বলেন, অদ্যবধি রাজশাহীর কোন ব্যাংক এই ডেভেলপার সেক্টরে কোন প্রকার ঋণ দেয়নি। উপরন্তু অনেক ব্যাংকই ডেভেলপাদের নিকট হতে ভালো সহযোগীতা পেয়ে থাকে। আমাদের কিছু কাষ্টমার ফ্ল্যাট বন্ধক দিয়ে কিছু ঋণ পেলেও তা হয়ে থাকে অত্যান্ত ঝামেলাপূর্ণ।
তিনি বলেন, আমরা জানি ব্যাংকও একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান তারাও ব্যবসা করতে চাইবে এটাই স্বাভাবিক। আমরা আমাদের সাথে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে তাদের পূর্ন নিশ্চয়তা দিতে চাই যে, তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থ তারা সঠিক সময়ে ফেরত পাবে। কারন কাজ শুরু দেখলে আমাদের কাষ্টমাররা তাদের কাছে পাওনাকৃত কিস্তি প্রদান করা শুরু করবে। এতে করে ব্যাংক যেমন নিরাপদ থাকবে তেমনই আমরাও আমাদের সম্মান ধরে রাখতে পারব।
তিনি ব্যাংক কতৃপক্ষের উদ্যেশ্যে বলেন, আমরা এই এ্যাসোসিয়েশন থেকে শুধুমাত্র সেই সকল প্রতিষ্ঠানকে ঋণপ্রদানের সুপারিশ করাবো যারা এই টাকা নিজের না ভেবে আমানাত হিসাবে গ্রহন করবে। এর ফলে আমরা আশা করি ব্যাংক ও ডেভেলপার উভয়ই লাভবান হবেন। সেই সাথে আমরা আহবান জানায় সেই সকল ব্যাংককে যারা ফ্ল্যাটের কাষ্টমারদের ঋণ প্রদান করে থাকেন। আমাদের অনুরোধ থাকবে তারা যেন এ বিষয়টি সহজিকরণ করেন এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে দ্রæত ঋণগুলো প্রদান করেন।
নানাবিধ সমস্যায় ভুগতে থাকা এই কোম্পানীগুলো দেশের এই আপদকালীন সময়ে সরকারের সহযোগীতায় তার সাধ্যমত কাজ করে যাচ্ছে বলে সরণ করিয়ে তিনি বলেন, ইতিমধ্যেই রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন মেয়রের আহবানে সাড়া দিয়ে ১০ টন চাল, ৫০০০ মাস্ক মেয়রের ত্রান তহবিলে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া রাজশাহী জেলা প্রশাসকের ত্রান তহবিলে ৪০০ প্যাকেট চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি প্রদান করা হয়। এখানে উল্লেখযোগ্য যে, মিস্ত্রি,লেবার,গার্ডকে পর্যাপ্ত পরিমানে ত্রান দেওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোন কর্মচারীকে চাকুরীচুত্য করা হয়নি এবং তাদের মাসিক বেতনও যাথা সময়ে প্রদান করা হচ্ছে।
তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট বিনীত প্রার্থনা এই যে, আমাদের এই এ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রণোদনা তহবিল হতে ২০০ কোটি টাকা প্রদান করা হোক। যা রাজশাহীর তথা সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে। আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এখন থেকেই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারলে আগামীর সংকট সহজে মোকাবেলা করা সম্ভব। এখানে উল্লেখযোগ্য যে, রাজশাহীর এই শিল্পটিকে যদি বাঁচানো যায় তবে এর সাথে জড়িত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসহ রাজশাহীর ২ লক্ষ মানুষকে দারিদ্রের হাত থেকে বাঁচানো সম্ভব হবে।